এই পৃথিবীতে একটি সবুজ বন ছিল । বনের নামটি কি হতে পারে তা আপনারা এই গল্প
শেষে নিজেরাই ঠিক করবেন । বনটির সর্বত্র সবুজে ঘেরা, সবুজ আর সৌন্দর্যে ঘেরা । বনে
বসবাস করত অনেক শান্ত এবং শান্তি প্রিয় কিছু প্রাণী । কবুতর, টিয়া, শালিক, বুলবুলি,
ময়ুর সহ আর অনেক জাতের পাখি । আর তাদের সাথে সমান্তরালে ভুমিতে চরে বেড়াত গরু,
ছাগল, মহিষ, হরিন, গাধা, বানর, হুনুমান, শিয়াল, কুকুর, বাঘ, সিংহ, গণ্ডার সহ আর
অনেক ধরনের পশু পাখি এমনকি বনের খাল-বিল পুকুড়, নদী এবং বনের পাশের সমুদ্রেও বসবাস
করত শাপ, ব্যাঙ, মাছ, কুমির, শুশুক সহ অনেক ধরনের বিচিত্র সব প্রাণী । তবে সবচেয়ে
আকর্ষনীয় বিষয় ছিল – তারা সবাই একত্রে মিলে মিশে বসবাস করত । বনের ইকো-সিস্টেম
বজায় রাখার জন্য প্রত্যেক প্রজাতীয় যতেষ্ট পরিমান নম্রতা, শালিনতা, এবং দুরুত্ব
বজায় রেখে বসবাস করত । কেউ কারো অহংকার অহমিকার ধার ধারত না। এমনকি নিজের মতিভ্রমে
যদি কখনও অহমিকা দেখানোর ইচ্ছা হত তাতেও কোন উপায়ন্তর ছিল না ।
দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেল অনেক নিরিবিলি ভাবে । কিন্তু এত নিরিবিলি তে শিয়াল
মশাইয়ের কিছুটা সমস্যা শুরু হয়ে গেল । বনের কচি মুরগীর সংখ্যা কমতে কমতে প্রায়
শেষের দিকে চলে আসল । এমন পরিস্থিতি কি আর
বনের শিয়ালদের সহ্য হয় । খাদ্য সল্পতায় আর সারাদিন নিরিবিলিতে বসবাস করলে ত নিজের
মুখের এবং গলার স্বরে জং ধরছে তাই মাঝে মাঝে একটু হুক্কাহুহা না করতে পারলে আর
সাথে কিছু কচি মূরগী গলাধকরন না করতে পারলে কি আর গলার স্বর ভাল থাকে । কিন্তু
নিরিবিলি পরিবেশে অকারনে হুক্কাহুহা করলে অথবা কচি মুরগী শিকার করলে যে, মুরগী সংরক্ষন কমিটি এসে উত্তম-মাধ্যম দিয়ে
যায় কারন মুরগী প্রজাতি দিন দিন বিলিন হয়ে যাচ্ছে । আর মুরগী সংরক্ষন কমিটির ও কিন্তু একটা মহৎ
উদ্দেশ্য ছিল- আর তা হল, বনের অন্য প্রাণীর উপার্জিত শস্য থেকে নিজেদের ভাগ নেওয়া
। মুরগী সংরক্ষন কমিটির আবার কাজ কর্ম করতে একদমই ভাল লাগে না। এর অর উপর একটু
খবরদারী করে দিন পার করতে পারলে মন্দ হয় না । আর এখানেই শুরু হল বিপত্তি ।
এমন বিপত্তিতে শিয়াল মশায়দের আয়েশী জিবনে কিছুটা ভয়ভীতি যুক্ত হয়ে গেল, এমন
অসস্থিতে বসবাস নিরাপদ নয় । তাহলে কি করতে পারে শিয়াল মশাই- যেই ভাবা সেই কাজ।
ফুন্দি ফিকির শুরু করে দিল শিয়াল । চলে
গেল সমুদ্রের তীরে বসে বসে ভাবতে
লাগলো What can we do? বলে রাখা ভাল – শিয়াল মশাই
কিন্তু আবার ভাল বাংলা বলতে পারে না । প্রায় শত বছর ধরে বিভিন্নভাবে ছলচাতুরী করে
কচি মুরগী খেয়ে নিজের গলার স্বর কিছুটা নামিয়ে সমূদ্র তীরে ভেবে ভেবে শেষ অব্দি
একটা ফন্দি এটেই ফেলল – বলে রাখা ভাল যে, “কুমির আর শুশুকের খেলা দেখতে দেখতেই তার
মাথায় একটা উপযুক্ত ফন্দীর উদয় হয় – আর কুমির আর শুশুকের খেলা কিন্তু সর্বক্ষন
জয়-পরাজয় অমিমাংশিতই থাকত” ।
শেয়াল ভাবল, যদি কোনভাবে এই কুমির আর শেয়ালের বন্ধুতের খেলায় সামান্য দন্দ যুক্ত
করে দেওয়া যায়, তাহলে হয়ত দন্দ নিরসনের নাম করে শেয়াল সংরক্ষন কমিটিকে একটা
উপুযুক্ত শিক্ষা দেওয়া যাবে । শেয়াল ঠিক ঠাক একটা বুদ্ধি এঁটে একদিন কুমির -
শুশুকের খেলার কিছু নিয়ম বানিয়ে ফেলল আর নিজে সে খেলার রেফ্রিং / আম্প্যারিং এর
দায়িত্ব নিল – বেচারা কুমির আর শুশুক ও ভাবল- শেয়াল মশাই জ্ঞানীগুণী , বিচক্ষন তার
মধ্যস্থতায় খেলার একটা জয় পরাজয় ফয়সালা হবে । রোজ রোজ ড্র ম্যাচ খেলে লাভ কি । এভাবে আরো কিছু বছর কেটে গেল – একদিন শেয়াল
কুমির আর শুশুক কে ডেকে বলল তোমাদের আজকের খেলায় যে জিতবে তাকে আমি পুরুষ্কৃত করব
। এটা শুনে কুমির – শিয়াল জীবন বাজী রেখে খেলার জন্য মনস্থির করে ফেলল । হাজার
হলেও ত পুরষ্কার বলে কথা ।
যথারীতি খেলা শুরু, কুমির শুশুকের উপর ঝাপিয়ে পরে ত আবার শুশুকের উপর ঝাপিয়ে
পরে । এ অর লেজে কামড় দেয় ত কিছুক্ষনপর ও এর লেজে কামড় দেয় । দীর্ঘক্ষন খেলা চলতে
থাকে। কেউ ক্লান্ত হয় না। বা কেউ ই পরাজয় বরন করে না । এদিকে বনের সব প্রানীরাই
এসে হাজীর । বিশাল দুই পালয়ানের খেলা দেখার জন্য । সকাল যায়, দুপর গরিয়ে বিকেল হয়
এরপর বিকেল গরিয়ে সন্ধে খেলা চলে । শেয়াল খুজতে থাকে দর্শক সারিতে মুরগী সংরক্ষন
কমিটির সদস্যদের । ২/৪ তাকে পেলেই কামড়ে দেয় । এমন করে দির্ঘক্ষন খেলা চলে – একসময়
শেয়াল ও দর্শক সারিতে থাকা মুরগী সংরক্ষন কমিটির অনেক সদস্যকে ঘায়েল করে ফেলেছে । যাই
হোক দীর্ঘক্ষন খেলার পর কুমির-শুশুক ক্লান্ত হয়ে পরে আর খেলা ছেরে বিশ্রাম নিতে
থাকে । এমনসময়, দর্শক সারিতে থাকা বাকি পশু, প্রানিরা লক্ষ্য করে শেয়ালের অপকর্ম ।
সবাই এই অপকর্ম একযোগে প্রতিবাদ করলে শেয়াল দৌড় দিয়ে পালায় । আর পালানোর সময়
কুমির-শুশুক কে বলে যায়, আমি যদি বনে সম্মানের সাথে আবার কোনদিন আসতে পারি তাহলে
তোমাদের দুজনকেই উপহার দিয়ে যাব ।
পুরুষ্কারের লোভে পরে কুমির আর শুশুক মুরগী কমিটির সাথে হওয়া অন্যায় ভুলে –
বনের বাকি প্রাণীদের ভয়ভীতি, অনুনয়-বিনয় করে শান্ত করে । তারপর, আমন্ত্রন করে
শ্যেয়াল মশাইকে । আয়োজন করা হয় আর কিছু কচি মুরগীর । শেয়াল ও মুরগীর লোভে এসে
উপস্থিত । মুরগী খেয়ে যখন ফিরে যাবে এমন সময় শুশুকের আবদারে পরুষ্কার সরুপ বনকে
বিভক্ত করে দিয়ে বলে এই অংশ কুমিরের খেলার মাঠ, আর বাকি অংশ শুশুকের খেলার মাঠ । আর
শেয়াল কুমিরের খেলার মাঠ সরুপ বনের কিছু অংশ অমিমাংশিত করে রেখে চলে যায় । আর বলে যায় তোমাদের পরবর্তী খেলার পুরুস্কার
সরুপ অই অংশ – নিজেরা নিজেরা খেলতে থাক যে জিতবে সে নিবে ।
এই অমিমাংশিত বন নিয়ে কুমির আর শুশুক আবার খেলা শুরু করে দেয় । কিন্তু বেচারা
কুমির-শুশুক কি আর আগেরমত খেলতে পারে? দির্ঘক্ষন হার না মানা খেলা খেলে ত দুজনেই
ক্লান্ত। তারপরও কে ছাড়ে পুরষ্কার । তাই অগত্যা খেলা চালিয়ে জেতে হয় তাদের । কারন –
বনের সাথে বনের প্রাণীদের ও ভাগ করে দেওয়া হয় তাদের । আর নিজেদের অঞ্চলে বসবাসকারী
প্রাণীদের সামনেত আর পরাজিত হওয়া যায়না । ইতিমদ্ধে এই খেলায় যুক্ত হয়ে গেছে, কিছু
হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভাল্লুক, বানর, হুনুমান, সিম্পাঞ্জি, হায়েনা, ইদুর, বিড়াল, সাপ,
বিচ্ছু, গাধা, গরু, ছাগল । কেউ চলে গেছে কুমিরের দলে আর কেউ চলে গেছে শুশুকের দলে
।
খেলা চলছে, কুমির কবুতর বসবাসকারী অঞ্চলের অর্ধেক প্রায় নিজের দখলে নিয়ে
তারিয়ে দিয়েছে শুশুককে । এই পরিস্থিতিতে শুশুক কি করবে ভেবে না পেয়ে অবশেষে খেলার
নিয়ম ভেঙ্গে কামড় দিয়ে বসে কুমিরের লেজে । আর কুমীরের লেজে ঝুলিয়ে আনন্দে উল্যাসে
মত্ত বানরের ভরে ছিঁড়ে পরে যায় কুমীরের
লেজ । এঁটে আনন্দে উল্যাসে মেতে ওঠে বানর, আর কুকুরের দল । সাথে মনে মনে খুশি হয়
শুশুক । তবে এই লেজ টানাটানিতে মারা পরে কিছু উইপকা, ঝিঁঝিঁপোকা, গাধা আর গরু ।
কুমীর লেজ হারানোর ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে কবিতর বসবাসের দখল করা অংশনিয়েই
আপাতত মলম লাগাতে থাকে । আর শুশুক আফসোস করে লেজটা বানর আর কুকুর নিয়ে টানা টানি
করতে থাকে বলে । নিজের প্রাপ্য পুরুষ্কারের অংশ হারিয়ে এমনকি যতোটুকু পেয়েছে তাও
মাঝে মাঝে খেলার পুরুস্কার হিসাবে জমা দিতে হয় বলে ।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন